Publised in amadershomoy.com
হাসান আল বান্না: চিঠি একজন মানুষের জীবন্ত ডায়েরির নাম। নিজের অনুভূতি লিপিবদ্ধ হয় চিঠিতে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চিঠি হচ্ছে হৃদয়ের পাহারাদার। তাই তো চিঠি আসার সাথে সাথেই হৃদয়টা কেঁপে ওঠে। চিঠির ভেতরে যাই থাকুক না কেন! চিঠির আলাপনে যাই হোক না কেন! হৃদয়টা কাঁপবেই। কেন এই কাঁপন? কারণ একটাই চিঠি হচ্ছে হৃদয়ের পাহারাদার।
মানুষ চিঠি লিখে, কারণে অকারণে চিঠি লিখে। কারণ যাহাই থাকুক চিঠি তার হৃদয়ের ভাষা। চিঠি তো সবসময়ই পাই। কখনো উড়ো চিঠি, আবার কখনো খোলা চিঠি। সব চিঠির অনুভূতি একই। যার নাম কেবলি চিঠি।
শৈশবে প্রথম চিঠি পাই বইয়ের মোলাটে। অংক খাতায় প্রথম একটি সূত্র পাই যা কোন গাণিতিক সূত্র নয়। পিথাগোরাসের উপপাদ্যের ভাজে পাশাপাশি দুটি পিরামিডের চিহ্ন। জানিনা সেটা চিঠি ছিল কিনা? তা চিঠি হোক বা না হোক পেন্সিল ওয়ালা কি বুঝাতে চাইছে তা বুঝে গেছি। এরপর থেকে আর পিথাগোরাসের উপপাদ্যই পড়িনি।
তারপর সেই থেকে বহুচিঠি পাঠিয়েছি চাঁদের কাছে কিন্তু সে চিঠির শেষ গন্তব্য কোথায় ছিল তা আজও অজানা। আমি শুনেছি, সবাই তো চাঁদে চিঠি পাঠায় তবে যারা চাঁদের চিঠি পায় তারা নাকি ভাগ্যবান। আর আমি কখনও সেই ভাগ্যবান হতে চাইনি।
আমি আজ পর্যন্ত একটি চিঠির জন্য অপেক্ষমাণ। যে চিঠি আজো আসেনি। কত বিকেল আর কত বসন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনেছি। অপেক্ষার প্রহর এখনো অপেক্ষমাণ। আমার শেষ চিঠিটি হওয়ার কথা ছিল বিরহের শেষ চিঠি। হয়নি আর পাইনি। না পাওয়ার বেদনায় আজকের বিকেলটাও অতিবাহিত হলো।
চিঠি কি আর আসবে? আসবে সে কিসে? কীভাবে? ডাক যোগে নাকি পালকিতে? এইসবের কোন কথাই আজ ভাবিনা? মনে হচ্ছে গণিতের খাতায় পিথাগোরাসের উপপাদ্যেই বর্ণিত ছিল জীবনের প্রথম এবং শেষ চিঠি। আচ্ছা, মানুষ তার প্রথম চিঠির প্রাপ্তির পর চাঁদের চিঠি কিংবা বিরহের শেষ চিঠি পেয়ে থাকে? আর আমার মতো অনন্তকালের যাত্রীর কপালে বিরহের শেষ চিঠি টুকুও জোটেনা।
তবে অনন্তকালের পথে! বাঁকে! রাস্তায় কোন মোড়ে কাগজের ঠুঙ্গায় বিরহের শেষ চিঠি পড়ে থাকতে দেখে বিচলিত হতে পারি কারন সেই চিঠিই হতে পারে জীবনের সর্বশেষ অধ্যায় অতঃপর বাকি থাকে কেবলি নিথর দেহ…
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
এসএবি/এসএ