-হাসান আল বান্না :
(দৈনিক ভোরের ডাকে প্রকাশিত কলাম)
প্রায় বিশ কোটি মানুষের দেশ যার বেশিরভাগই সমভূমি। পার্বত্য অঞ্চলে কিছু পাহাড় আছে। সিলেটে কিছু উঁচু নিচু টিলা আর দু’একটা ঝর্ণা আছে। এর বাইরে কক্সবাজার আর কুয়াকাটায় রয়েছে সমুদ্র সৈকত। কিন্তু এইসব পাহাড় সমুদ্র এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষের আর্থিক সক্ষমতার বাইরে। সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পথঘাটে ঝক্কিঝামেলা এবং পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবমিলিয়ে ৯৯ ভাগ মানুষের জন্য পর্যটন হাতের নাগালের বাইরে। আর এক ভাগ পর্যটক যাদের সক্ষমতা রয়েছে তারা নিরাপত্তা এবং যাতায়াত অব্যবস্থপনার কারণে বিদেশে পাড়ি দেন। বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি চলে আসছে। এর কোন সঠিক সমাধান নেই কারো কাছে।
এদেশের মানুষের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়েছে বহুমুখী কর্মসংস্থান। মানুষ এখন তার মৌলিক চাহিদা পূরণের সাথে সাথেই পরবর্তী যে বিষয়টি চিন্তা করে তা হচ্ছে বিনোদন এবং পর্যটন। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলাতেই কোন পর্যটন স্পট নেই। অথচ প্রতিটি জেলা উপজেলাতেই নদ নদী খাল বিল রয়েছে, যেগুলো ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হতে পারে। সামান্য কিছু উদ্যোগ নিলেই হাজারো পর্যটন প্রেমির মনের খোঁড়াক বয়ে আনতে পারে।
প্রতি বছর ঈদ আসে দুইটি। যেই ঈদ হচ্ছে এদেশের মানুষের অবকাশ যাপনের প্রধান সময়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং ভাষা দিবসেও মানুষ অবকাশ যাপনের নিরাপদ ও প্রাকৃতিক জায়গা খোঁজে। আর প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার এবং শনিবার তো আছেই, যেদিন মানুষ পরিবার নিয়ে ছোটো পরিসরে হলেও নিজের ও পরিবারের মানসিক প্রশান্তি খোঁজতে কোন না কেন প্রাকৃতিক পরিবেশ চায়। কিন্তু জনসাধারণের এই পর্যটন কেন্দ্রীক চাহিদার কোন প্রস্তুতি কি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আছে?
খুব বেদনার দিক লক্ষ্য করি, ঈদের ছুটিতে মানুষ কোন পর্যটন স্পষ্ট না পেয়ে গ্রামের রাস্তার মেঠোপথে দাঁড়িয়ে অথবা গ্রামের স্কুলের কোন বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে যখন ছবি তোলে। কিছু সময় হাওয়া বাতাস খেয়ে দুধের সাধ ঘোলে মিটিয়ে মনে বিষন্নতা কমাতে চায়। দু’একটা জেলাতে কোন ব্যক্তি পর্যায়ে খামারবাড়ি বা টুরিস্ট স্পট অথবা নদীর ধারে ঘুরতে বেড়ানোর সুযোগ থাকলেও সেখানে একটু হালকা নাস্তা করার নূন্যতম ব্যবস্থা নাই। মাঝেমধ্যে ফুচকা পাওয়া গেলেও তা যে বাসি এবং অনিরাপদ যা দেখলেও বমি আসে।
পর্যটন শিল্পের উত্তরণের পদ্ধতি কি? সোজা হিসাব। বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করতে প্রতিটি উপজেলা ভিত্তিক কার্যক্রম জোড়ালো করা। প্রতিটি উপজেলায় নদী, খাল বিল, হাওর, বাওর চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে এবং শিশুপার্কের অবায়বে কিছু বিনোদন কাঠামো সেট করা। সাথে উন্নত রুচিশীল মুখরোচক খাদ্যের সরকারিভাবে স্টল করা। এটা মোটামুটি সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে শুরু করা। পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের মূল যেসব প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট যেমন সমুদ্র সৈকত, পাহাড় রয়েছে, এসব পর্যটনে সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে কম খরচে যাতায়াতের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ কর।
এছাড়া বাংলাদেশের দ্বীপ জেলা ভোলা। ভোলায় রয়েছে সমুদ্র সৈকত সাথে একাধিক গড়ে উঠা সমুদ্রের মাঝে বিশাল চর। যেসব সমুদ্রের চরে সহজেই ইকো পার্ক গড়ে তোলা সম্ভব। এর বাইরে নোয়াখালীর হাতিয়ার, সূবর্ণ চর, ভাসান চর সহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা এবং পটুয়াখালী এলাকায় নতুন সমূদ্র ভিত্তিক পর্যটন, ইকো পার্ক এবং প্রমোদ তরী ব্যবস্থা করে পর্যটন শিল্পকে উন্নত উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব।
আর এই সব সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম জোড়ালো ভাবে গ্রহণ করতে হবে। তবেই এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী তার বিনোদনের খোঁড়াক পাবে হাতের নাগালে। পাশাপাশি দেশের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
Mail Article LInk: